অবৈধ অস্ত্রের তথ্য দিলে তথ্যদাতাকে পুরস্কৃত করা হবে এবং তার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বহুল আলোচিত মেঘনাপাড়ের গুয়াগাছিয়া অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, "অবৈধ অস্ত্র আছে এমন তথ্য পেলে আমাদের জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব। যিনি তথ্য দেবেন, তাকে পুরস্কৃত করা হবে এবং তার পরিচয় শতভাগ গোপন রাখা হবে।"
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে শক্তিশালী করতে কোস্টগার্ডের টহলও বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
গুয়াগাছিয়ায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “এটা মুন্সীগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি ছিল। এখন সাময়িকভাবে হলেও ক্যাম্প চালু হয়েছে। আমি নিজেও মুন্সীগঞ্জের সন্তান, তাই এর গুরুত্ব আমি বুঝি। আশা করছি এটি দ্রুত স্থায়ী রূপ পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বলছি না দেশে সমস্যা নেই। হাজারটা সমস্যা আছে, কিন্তু আমাদের কাজ হলো সেই সমস্যা মোকাবিলা করা। সবাই নিজের স্বার্থে কথা বলবে, কিন্তু আমরা সরকার পক্ষ থেকে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করব।”
গজারিয়ার আলোচিত চরিত্র নয়ন ও পিয়াশ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “শোনা যাচ্ছে তারা দেশেই নেই, পাশের কোনো দেশে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তারা দেশে ফিরলে কেরানীগঞ্জ জেল ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা থাকবে না। এই এলাকায় তাদের কোনো স্থান হবে না।”
আলুর দাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা কোল্ডস্টোরেজের গেটে আলুর দাম কেজিতে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছি। এ কারণে এখন আলু কম বের হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। আশা করি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে।”
খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বলেন, “খুচরা বাজার আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বড় বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছি। তবে প্রশ্ন কেউ না কেউ তুলবেই।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, গজারিয়া ইউএনও মো. আশরাফুল আলম, মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম, কোস্টগার্ড ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে দুর্গম এলাকাটি ঘুরে উপদেষ্টা জানান, পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের ফলে স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এলাকাবাসীরা জানান, ক্যাম্প চালুর পর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়েছে এবং অনেকে আবার নিজ গ্রামে ফিরে আসছেন।
মুন্সীগঞ্জে গত দুই বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুন ও ডাকাতির মতো অপরাধ কমেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, দুর্গম এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার প্রস্তাব ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ২২ আগস্ট চালু হওয়া এই ক্যাম্প ঘিরে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন এবং পুলিশের টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে — যার ফলে গুয়াগাছিয়া এখন আলোচনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে।
0 Comments