বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ, প্রতারণা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি; এমনকি জামিন না নিয়েই তিনি পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এসব অভিযোগ তুলে তাঁকে দ্রুত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এক নারী।
ভুক্তভোগী নারী ঢাকায় কর্মরত একজন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা।আজ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৯ জুন ফেসবুকে পাত্রী চাওয়ার একটি পোস্ট থেকে নাজমুস সাকিবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সাকিব তখনও তাঁকে জানাননি যে তিনি বিবাহিত এবং তাঁর সন্তান রয়েছে। কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন, সাকিব একই সঙ্গে এক নারী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিয়ের দাবি তুললে সাকিবের পরিবারের সদস্যরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। এরপর তিনি আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং হত্যাচেষ্টা- এই তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলাটি চলতি বছরের ২০ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশে শাহবাগ থানায় এজাহার হিসেবে এটি গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, মামলাগুলোর তদন্তে প্রভাব খাটানো হচ্ছে।পিবিআই দুই মামলায় ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ দিলেও তিনি সেই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সময় তিনি ওই দুটি মামলার সঠিক তদন্ত দাবি করেন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হলে কি জামিন ছাড়াই এভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা? তাহলে আইন কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য?’
তিনি জানান , ‘সাকিবের প্রথম স্ত্রীও তাঁর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেছিলেন। সাকিব তখন কিছুদিন জেলেও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর তিনি চাকরিতে ফিরে আসেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি ভৈরবে থাকি, আর সে ঢাকায় থাকে। কীভাবে তাঁর এমন সম্পর্ক হতে পারে? মামলার তদন্ত চলছে, তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তদন্তে যা হবার হবে।’
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পুরো বিষয়টি ক্লোজলি মনিটর করা হচ্ছে। আপতত এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র :কালের কন্ঠ
0 Comments