ঋণের উচ্চ সুদহারই বহাল থাকছে। এর ফলে বেসরকারি খাতে অর্থের প্রবাহ বা ঋণ কমবে। মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসার আগ পর্যন্ত ঋণের সুদহার কমানো হবে না । বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য নতুন মূদ্রানীতিতে এমন ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নতুন মূদ্রানীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জনে সহায়ক নীতির বাস্তবায়ন চায়।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, পলিসি রেট বা নীতি সুদহার কমানোর জন্য মূল্যস্ফীতি কমানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যখন ৩ শতাংশের নিচে নামবে, তখনই আমরা সুদহার কমাতে পারবো। বর্তমানে পলিসি রেট ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামলেই পলিসি রেট পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকবে। তবে, গভর্নর তার বক্তব্যে এও বলেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অতিরিক্ত করের কারণে যদি দেশীয় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে তাৎক্ষণিক নীতি সহায়তা দিবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার পর গত ৪ মাস দেশে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী গতিতে রয়েছে। বিগত ৩ মাসের ধারাবাহিকতায় গত জুনে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসে। এটি বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আমরা কিছুটা সফল হয়েছি। এখন সেটা সাড়ে ৮ শতাংশের ঘরে। আশা করছি, কয়েক শতাংশ কমে মূল্যস্ফীতি তিন শতাংশে নেমে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতিকে তিন শতাংশে না নামানো পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট নই।
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দুটি দিক থেকে নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হয়— এক, সরবরাহের দিক থেকে এবং দুই, চাহিদার দিক থেকে। আমরা প্রথমে চাহিদা কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি। তাই সুদহার বাড়াতে হয়েছে, যার ফলে ব্যাংক ঋণ ও তারল্য কমেছে। একই সঙ্গে সরকারও বাজেট কমিয়েছে।
তিনি জানান, গত বছর ডলারের সংকট থাকলেও আমরা বিদ্যুৎ, সার ও এলএনজির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমদানিতে বিঘ্ন ঘটতে দিইনি। ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমে ১২২ টাকা রেট নির্ধারণ করি, পরে বাজারের ওপর ছেড়ে দিই। অনেকে ভেবেছিল তখন রেট ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।
তিনি বলেন, সুদহারের কিছুটা নিম্নমুখী এরই মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ওভারনাইট রেটও সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে, যাতে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রেখে সহজে মুনাফা করতে না পারে। মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক, পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্রগণ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) মূদ্রানীতির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, নতুন মূদ্রানীতি বেসরকারি খাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই জানায়, দেশে বর্তমানে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
নয়াশতাব্দী/এনএ
0 Comments