Header Ads Widget

স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতে রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় বৃদ্ধি

 


স্থলপথে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। তৈরি পোশাকসহ নানা পণ্যের চাহিদা ও বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা এ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র দুই মাসেই রপ্তানি বেড়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার একটি বড় প্রমাণ। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকশিল্পে চীনের পর বাংলাদেশের অবস্থান এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল ভিলেজের পরিচালক মির্জা ফাইয়াজ হোসেন বলেন, “ভারতের বিভিন্ন বিধিনিষেধের পরও রপ্তানি বৃদ্ধিই প্রমাণ করে আমরা ক্রেতাবান্ধব ও সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে আছি। বাংলাদেশের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ভারতের তুলনায় অনেক উন্নত। এজন্য ক্রেতারা অতিরিক্ত ব্যয় মেনেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছেন।”

উল্লেখ্য, চলতি বছর ভারত বেশ কয়েক দফা স্থলপথে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ১৭ মে তৈরি পোশাকসহ ছয় ধরনের পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন পাট ও পাটজাত পণ্য, ওভেন পোশাক, প্লাস্টিকসহ আরও নয়টি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সর্বশেষ ১১ আগস্ট আবারও কিছু পাটজাত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে এসব পণ্য শুধুমাত্র সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নহাভা শেভা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা যাচ্ছে। এ ছাড়া খাদ্যপণ্য, কোমল পানীয়, কাঠের আসবাব, তুলার বর্জ্য এবং প্লাস্টিকপণ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজোরামের স্থলবন্দরের বদলে শুধু কলকাতা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৬ লাখ ৬২ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ এ খাতে রপ্তানি কমলেও, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের উচ্চ চাহিদার কারণে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি এসেছে।

জুলাই-আগস্ট মাসে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নিট ও ওভেন পোশাক, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিল স্ক্র্যাপ, কাঠের আসবাবপত্র, জানালা-দরজার ফ্রেম, টেবিল, কিচেন ফার্নিচার, সিংক, টেবিল ওয়্যার, মেশিনারিজ পার্টস, মাছ ও শুঁটকি, আলুর বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ভোজ্যতেল, সাবান, কাগজজাত পণ্য, টেক্সটাইল সামগ্রী এবং পাটপণ্য।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাটপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, মাছ ও আসবাবের বড় বাজার রয়েছে। তবে মোট রপ্তানি আয়ের এক-তৃতীয়াংশ তৈরি পোশাক থেকে আসে। আগে অধিকাংশ পোশাক কলকাতা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হলেও এখন সমুদ্রপথই প্রধান ভরসা। ভারতীয় ক্রেতারা বাংলাদেশের পণ্যের প্রতি আস্থা রাখায় অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় মেনেও তারা সমুদ্রপথে পণ্য আমদানি করছে।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “গত দুই মাসের রপ্তানি আয় আমাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। ভারতের বাজার বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়। এখন কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে যদি স্থলপথের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো যায়, তবে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।”

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ও ক্রেতাবান্ধব অবস্থান ভারতের বাজারে রপ্তানিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালক হয়ে উঠেছে।

Post a Comment

0 Comments