![]() |
গত শুক্রবার মধ্যরাতে নিজ বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদছবি: প্রথম আলো |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে নিজ বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ
গত শুক্রবার মধ্যরাতে নিজ বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।
![]() |
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার রাতে প্রক্টরের ঘোষণায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টিকে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা বলছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রক্টর কি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন? তিনি হয়তো উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে এমনটি বলেছেন।’ নাহিদুজ্জামান বলেন, হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে গুপ্ত রাজনীতি বেড়ে যাবে।
হলগুলো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে শুক্রবার রাতেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা–করবিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত করা যায়নি। তবে তিনি মনে করেন, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিসরে কীভাবে ছাত্রসংগঠনগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত খুবই অপরিণামদর্শী। যাঁরা দিয়েছেন এবং যাঁরা নিয়েছে, তাঁরা উভয়ই এ বিষয়ে বিস্তৃত ফলপ্রসূ কোনো চিন্তা করেনি।’
এর আগে শুক্রবার ছাত্রদলের হল কমিটি প্রকাশের পর হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে নিজ হল সুফিয়া কামালের প্রাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক নেত্রী উমামা ফাতেমা। তিনি মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছিলেন। উমামা গতকাল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, হলে রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি করার সুযোগ দিলে সেখানে পেছনের দরজা দিয়ে দখলদারি প্রবেশ করবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থী সবার মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি দরকার নেই বলে মনে করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘শিবির দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, হলে রাজনীতি না হোক। আমরা চাই, হলের বাইরে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় রাজনীতি করুক।’
গুপ্ত রাজনীতি নিয়ে আলোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্রশিবিরের গোপন কমিটি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্রদল, বাম সংগঠনের অনেক নেতা ও শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে বিক্ষোভের সময় তাঁরা উপাচার্য ও প্রক্টরকে গোপন রাজনীতি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আবদুল কাদের গতকাল দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘শিবির শিক্ষার্থীদের প্রতি দেওয়া কমিটমেন্ট ব্রেক (অঙ্গীকার ভাঙা) করেছে। তাদের আগের কমিটি বহাল রেখেছে এবং দেদার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। হলে হলে শৃঙ্খলা কমিটি, ব্যাচ প্রতিনিধির নামে হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন হিসেবে কাজ করেছে।’
কাদের তাঁর স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ঢাবির হলে “গুপ্ত ও প্রকাশ্য রাজনীতি’ বন্ধ—প্রক্টরের এমন ঘোষণা আশার আলো দেখাবে না।’
সূর্য সেন হলে ছাত্রদলের নতুন কমিটির সদস্যসচিব আবিদুর রহমান বলেন, ‘শিবির দীর্ঘদিন ধরে হলে গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট করেছে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।’
তবে হলগুলোতে শিবিরের কোনো কমিটি নেই বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু বলেন, হলগুলোতে প্রকাশ্যে কমিটি না থাকলে গুপ্ত রাজনীতির চর্চা বেড়ে যাবে। প্রক্টর বলেছেন যে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ, কিন্তু গুপ্ত রাজনীতি তিনি কীভাবে নিষিদ্ধ করবেন? গুপ্ত রাজনীতির বৈশিষ্ট্যই তো হচ্ছে তা প্রকাশিত হবে না।
0 Comments